ভবিষ্যতে দেশেই তৈরি হবে হেলিকপ্টার, বিমান। প্রথমে মেরামত কারখানা এবং পরে তা সম্প্রসারণ করে নির্মাণের সক্ষমতা তৈরি করা হবে। আর আকাশযান মেরামত ও তৈরির কারখানা স্থাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট জেলাকে।
জেলার পরিত্যক্ত এয়ার স্ট্রিপে প্রথমে অ্যারোনেটিক্যাল সেন্টার স্থাপন করে প্রাথমিকভাবে বিমান ও হেলিকপ্টারগুলো মেরামত ও ওভারহোলিংয়ের কাজ করা হবে, পরে সেখানে এসব আকাশযান তৈরিও করা হবে।
মঙ্গলবার ঢাকায় জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকে লালমনিরহাটে লেগেছে আনন্দেও ছোঁয়া। সেখানে এই ধরনের একটি প্রকল্প হতে পারে, সেটি কল্পনারও অতীত ছিল তাদের।
প্রকল্পটি কেবল পরিকল্পনার মধ্যে আটকে নেই। এরই মধ্যে বিমানবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী, নির্দেশ দিয়েছেন প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা জমা দেয়ার।
এই সেন্টারটি তৈরি হলে বাংলাদেশ তার নিজের আকাশযান মেরাতমের পাশাপাশি ভুটান, নেপাল এমনকি ভারতেরগুলোও মেরামত করতে পারবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও একটি পথ খুলবে।
যে এলাকায় এটি হবে, সেখানে ব্রিটিশ আমলেই নির্মিত হয় বিমানবন্দর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশ রাজ তথা ভারতের প্রতিরক্ষায় এই বিমানবন্দরটির ভূমিকা ছিল।
কিন্তু ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মিত্র বাহিনীর সৈন্যরা দেশে ফিরতে শুরু করে। সাথে সাথে নিস্তব্ধতায় ঢুবে যেতে থাকে বিমান ঘাঁটিটি।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকে এক হাজার ১৬৬.৬৮ একরের এলাকাটি বিমান বাহিনীর কৃষি ফার্মে পরিণত হয়।
১৯৫৮ সালে স্বল্প পরিসরে পুনরায় বিমান সার্ভিস চালু করা হয়। সে সময় লালমনিরহাট-ঢাকা ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা। কিন্তু লাভজনক হতে না পারায় বিমান সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় বোমা হামলার পর পাকিস্তান সরকার বিমান ঘাঁটির স্থাপনাগুলো বিক্রি করে দেয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদরদপ্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাংগার, ট্যাক্সিওয়েগুলো পরিত্যাক্ত।
পরে ১৯৮৩ সালে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ এখানে কৃষি প্রকল্প গ্রহণ। এখন লালমনিরহাট মিলিটারি ফার্মের তত্ত্বাবধায়নে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার এবং সংরক্ষিত ভূমিগুলিতে চলছে কৃষি কাজ।
২০১১ সালের ১৯ মে ভূটানের যোগাযোগ মন্ত্রী এইচ ই লিয়নব পো নন্দলাল রাজ রায়ের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল পরিত্যক্ত বিমান ঘাঁটিটি পরিদর্শন করে।
সে সময় ভূটান-বাংলাদেশ ট্রানজিটের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করতে আগ্রহ প্রকাশ কওে দেশটি। ফলে ভূটান ও বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বিমান বন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেন।